ইফতেখার শাহজীদ, কুতুবদিয়া :

সাজেদা বেগম । বয়স ৪৫। স্বামী শামশুল আলম পেশায় একজন রিক্সা চালক। চার মেয়ে যথাক্রমে তাসমিন (১৬), ইয়াছমিন (১৪), খোরশিদা (১৩) ও শাবনুর (১০)। তাদের মধ্যে তাসমিন, ইয়াছমিন ও খোরশিদা স্থানীয় ছমদিয়া আলিম মাদ্রাসার নিয়মিত ছাত্রী। আর শাবনুর উত্তরণ বিদ্যা নিকেতনে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। মানুষের সাহায্য সহযোগিতা ও করুণায় ভর করে অনাহারে-অর্ধাহারে চলছে পাঁচ সদস্যের অভাবের সংসার। সাগরের করালগ্রাসে নিজ ভিটে মাটি হারিয়ে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময় ধরে বাস্তুহারা হিসেবে বাস করছেন উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ঝুঁকিপূর্ণ একটি পরিত্যক্ত ভবনে। চার মেয়ের ভরণ পোষণ ও পড়া-লেখার খরচ যোগাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি।

১৮ ডিসেম্বর (সোমবার) সরেজমিনে পরিত্যক্ত ভবনটি পরিদর্শন করতে গেলে সেখানে বসবাস করা উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের উত্তর মসজিদ পাড়া গ্রামের (৭ নং ওয়ার্ড) সাজেদা বেগম প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন।

দীর্ঘ এক যুগ পূর্বে নিজ ভিটে-বাড়ি সাগরের নিষ্ঠুর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেলে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আ.স.ম শহরিয়ার চৌধুরী পরিত্যক্ত এ ভবনে অসহায় পরিবারটিকে বসবাস করার অনুমতি দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে পরিত্যক্ত ভবনটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বাস্তুহারা এ পরিবারটিকে বিভিন্নভাবে একাধিকবার চাপ প্রয়োগ করা হলেও স্থানীয় কোন জনপ্রতিনিধি বা প্রভাবশালী তাদের পুনর্বাসন করতে ন্যুনতম পদক্ষেপ পর্যন্ত নেননি। কেউ চিন্তা করেনি তাদের মাথা গোঁজার ঠাই নিয়ে। সকলেই শুধু বলেছে ভবনটি যে কোন মুহুর্তে ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। কিন্তু কেউ বলেনি পরিবারটিকে জরুরী ভিত্তিতে অন্যত্র পুনর্বাসন করা দরকার। অনেকটা কান্নাভেজা কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বাস্তুহারা অসহায় এ পরিবারের প্রধান রিক্সাচালক শামশুল আলম।

শামশুল আলম আরও বলেন, সবাই আমাদেরকে ঘাঁড় ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় বের করে দিতে চেয়েছে। আমাদেরকে নিয়ে আজে বাজে কথা বলেছে অনেকে। আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই। চার মেয়েকে নিয়ে আমরা কোথায় যাব? কে আমাকে একটু থাকার স্থান দিবে? আমার পরিবারকে নিয়ে আমি বাঁচতে চাই। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে আমাদের উদ্ধার করা হোক। নিজেও বুঝতে পারছি ভবনটি বাস অনুপযোগী। যে কোন মুহুর্তে ধ্বসে পড়তে পারে। তারপরেও একটু মাথা গোঁজার আশ্রয়ের আবেদন জানিয়ে বক্তব্যগুলো এ প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধুরীর সাথে কথা বলে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় একযুগ আগে বাস্তুহারা অসহায় পরিবারটিকে তিনি ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিত্যক্ত ভবনে থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন। ভবনটি তখন মোটামোটি বাসোপযোগী ছিল। কিন্তু বর্তমানে ভবনটি নাজুক অবস্থায় রয়েছে এবং যে কোন মুহুর্তে ধ্বসে পড়তে পারে। দ্রুত পরিবারটিকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।